ফেয়ার ইউজেস পলিসি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া আইএসপি কিউবি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছে, নানারকম সীমাবদ্ধতার কারণেই কেবল কিউবি কেনো, কোনো আইএসপির পক্ষেই গ্রাহককে আনলিমিটেড ডাউনলোড সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়।
দ্রুতগতির ওয়াইম্যাক্স সুবিধা দিতে অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লি. ২০০৯ সালে কিউবি নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। ডেটা পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এই আইএসপি সম্প্রতি ফেয়ার ইউজেস পলিসি আরোপ করে। এর ফলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট গ্রাহকদের মধ্যে যারা আনলিমিটিড ডাউনলোডের জন্য স্কাই প্যাকেজটি কিনেছিলেন, তারা সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন এবং এদের অনেকেই এ বিষয়টি টেক বিভাগের নজরে আনেন। গ্রাহকদের মতামত এবং এসব বিষয়ে কিউবির জবাবের ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
গ্রাহকদের অন্যতম অভিযোগ ছিলো, শুরুতে ডাউনলোড করার সময় গতি যথেষ্ট ভালো থাকলেও পরে সেটি আর থাকছে না। এ ছাড়াও স্কাই প্যাকেজে আনলিমিটেড ডাউনলোডের যে প্রতিশ্রæতি কিউবি সে প্রতিশ্রুতি তারা কেনো রাখেনি এবং হঠাৎ করেই বা কোনো ফেয়ার ইউসেজ পর্লিসির বোঝা টানতে হবে?
এ প্রসঙ্গে কিউবির ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার সৈয়দ আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, কোনো অপারেটরের পক্ষেই বর্তমানে আনলিমিটেড ডাউনলোড সার্ভিস দেয়া সম্ভব নয়। কিউবিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব বিবেচনায় ফেয়ার ইউজেস পলিসি আনতে হয়েছে। তার মতে, কিউবির সব ধরণের গ্রাহকের সুবিধা নিশ্চিত করতেই এ পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে।
আশিকুর রহমান আরো জানিয়েছেন, কিউবির মোট গ্রাহক সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এ গ্রাহকের মোট ৭০ ভাগ বিভিন্ন ফিক্সড ডেটা প্যাকেজ-এ ক্রেতা। বাকী ৩০ ভাগ স্কাই বা আনলিমিটেড প্যাকেজ কিনেছেন। এই ৩০ ভাগ গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ১০ ভাগ গ্রাহকই স্কাই প্যাকেজের শতকরা ৮০ ডেটা ভাগ ডাউনলোড করেন। আশিকুর রহমান জানান, ফেয়ারর ইউজেস পলিসি আরোপ করা হয়েছে এই শেষ ১০ ভাগ গ্রাহকের জন্যই। বাকী ৯০ ভাগ গ্রাহক এর আওতায় পড়বেন না।
আলোচ্য এই শেষ ১০ ভাগ গ্রাহক তাদের প্রাপ্য সুবিধাটিই ব্যবহার করছেন। তাদের ক্ষেত্রে এমন পলিসি আরোপ কতোটা যুক্তিযুক্ত? এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পিআর, সিএসআর অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার শামিমা আক্তার জানিয়েছেন, কিউবি গুরুত্ব দিচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে। সবাই যেনো ঠিকমতো গতি পান সেটিই দেখা হচ্ছে। সীমিত কিছু গ্রাহক হয়তো এতে সমস্যায় পড়ছেন, তবে তাদের সংখ্যা নগণ্য। আর হঠাৎ গতি কমে যাবার কারণ আমাদের শেয়ার্ড নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা।’
আনলিমিটেড স্কাই প্যাকেজ বিষয়ে আশিকুর রহমান আরো জানিয়েছেন, ‘স্কাই আনলিমিটেড মানে একেবারেই যে আনলিমিটেড তা বলা যাচ্ছে না। বরং এতে একটা নির্দিষ্ট খরচ দিয়ে গ্রাহক সর্বোচ্চ নেটওয়ার্ক এবং ডাউনলোড সুবিধা পাচ্ছেন। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো আইএনপির পক্ষেই সম্ভব নয় ফেয়ার ইউজেস পলিসি ছাড়া এই মূল্যে আনলিমিটেড ডাউনলোড প্যাকেজ দেয়া’।
ফেয়ার ইউজেস পলিসি বিষয়ে সম্প্রতিক সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরাও জানতাম সমালোচনা হবে, তারপরও এ পলিসি গ্রহণ করতে হয়েছে এবং সেটি আমরা প্রকাশও করেছি, কারণ আমরা আমাদের যতোটুকু সীমাবদ্ধতা আছে, তা গ্রাহকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছি। আর এখনও যেসব সমস্যা আছে সেগুলো আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি।’
এ সীমাবদ্ধতা কী এবং তার সমাধান কীভাবে করা সম্ভব সে প্রসঙ্গে আশিকুর রহমান জানান, ‘ওয়াইম্যাক্স কানেকশনের জন্য বিটিএস বসাতে হয়, যেখান থেকে গ্রাহকরা নেটওয়ার্ক পেয়ে থাকেন। এটি অনেকটা মোবাইল ফোন টাওয়ারের মতোই। আমাদের এখন কভারেজ পুরো করতে আরো বিটিএস বা বেস স্টেশন বসানো প্রয়োজন। সে চেষ্টা আমরা করছিও, কিন্তু যতো দ্রুত এবং যতো সংখ্যক বিটিএস বসানো প্রয়োজন ততো দ্রুত সেটি আমরা করতে পারছি না। এর নানারকম কারণও আছে। স্টেশন বসানোর স্থান পাওয়া থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পোর্ট হয়ে মেশিনপত্র নিয়ে আসা এবং স্টেশন বসানো, এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে কোনো সমস্যা হলেই পুরো কাজটি আটকে থাকে।’
তাহলে কি বেস স্টেশনগুলো আগেই বসিয়ে নেয়া উচিৎ ছিলো না? -এমন প্রশ্নে আশিকুর রহমান বলেন, মোটামুটি সন্তোষজনক সেবা দেয়ার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন, সেটি আমাদের ছিলো। এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নেই গ্রহকদের দ্বিগুণ স্পিড দেবো এবং সেটি দেবো বিনামূল্যে। এই সেবাটি দিতে আমাদের ওপর কোনো চাপ কিন্তু ছিলো না। এমন নয় যে, আমাদের কোনো প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ডাবল স্পিড দিয়েছে। তবুও বাড়তি সেবা দেয়ার মনোভাব থেকেই আমরা এ কাজটি করেছি। এরপর যে হারে আমাদের গ্রাহক বাড়তে শুরু করে, সেটি অবিশ্বাস্য এবং নতুন গ্রাহকদের বড়ো অংশই ছিলো স্কাই ইউজার। অপরদিকে প্রতিটি বিটিএস-এর ডেটা বহন করার নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে। এর ফলে বিশাল সংখ্যক স্কাই ইউজার এবং পর্যাপ্ত বিটিএস-এর অভাব-সব মিলিয়ে ফেয়ার ইউজেস পলিসি নিতে হয়েছে।’
৫১২ কেবিপিএস স্কাই গ্রাহকদের জন্য ফোয়ার ইউজেস পলিসিতে মাসে ৩০ গিগাবাইট কোন হিসেবে ঠিক করা হলো বা এর আগে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে নেয়া হয়েছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগে হিসেবে করে দেখেছি সর্বোচ্চ আমরা কতোটা দিতে পারি। এর সঙ্গে আরো একটা হিসেবে ছিলো, একজন গ্রাহককে অন্তত দিনে এক গিগাবাইট ডাউনলোড যেনো দেয়া সম্ভব হয়।’
ডে
টা সার্ভিসের বাইরে কিউবির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী এমন প্রশ্নের জবাবে শামিমা আক্তার জানান, আমাদের কাস্টমার কেয়ারের আওতা এবং মান আরো বাড়ানো প্রয়োজন। টেলিফোনে সাপোর্ট আমরা মোটামুটি দিতে পারছি। কিন্তু অন লোকেশন সাপোর্টের ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দ্রুততম সময়ে সাপোর্ট পৌছে দিতে পারছি না। এক্ষেত্রে আমাদের আরো ভালো করা প্রয়োজন। আশিকুর রহমান আরো যোগ করেন, ‘কিউবির নিজস্ব ফেসবুক পেজ রয়েছে। আমরা নিজেরা একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি যাতে করে আমাদের ফেসবুকে কোনো গ্রাহক অভিযোগ করলে সেটি সরাসরি মেইল আকারে কাস্টোমার কেয়ার বিভাগে চলে যায়।’
অনেক ক্ষেত্রেই মাস শেষে গ্রাহকরা দেখতে পান নির্দিষ্ট প্যাকেজের বাইরে ব্যবহার করায় বাড়তি বিল যোগ হয়েছে। এই বিষয়ে প্যাকেজ শেষ হবার আগেই গ্রাহককে সতর্ক করা হয় না। এ বিষয়ে শামিমা আক্তার জানান, ‘এ অভিযোগটি সত্যি। আমরা এজন্য নতুন সফটওয়্যার তৈরি করছি যেটি প্যাকেজ শেষ হবার আগেই গ্রাহককে এসএমএস করে জানিয়ে দেবে যে তার ডেটা প্যাকেজ ফুরিয়ে এসেছে। আশা করা যায়, এটি খুব শীগগীরই চালু হবে।’
উল্লিখিত বিভিন্ন সমস্যার জবাবে কিউবি কর্তৃপক্ষ যা বললেন, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই অতীতের বিভিন্ন এইএসপির মুখরোচক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মেলে যার অনেকটাই পরে আর বাস্তবায়িত হয় না। কিউবির বেলাতেও এমনটা হবে কি-না সে প্রশ্নের জবাবে শামিমা আক্তার জানান, গ্রাহককে দেয়া প্রতিশ্রুতি না রাখলে যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে পরিণতি হয়, কিউবিরও তা-ই হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে।’