এশিয়া মহাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এক নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। প্রতি বছর বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি নানান দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য মানুষ। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করার মত ক্ষমতা এখনও মানুষের হাতে আসেনি, তবে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা অনেক সহজ হয় ও ক্ষয়ক্ষতিও কমানো সম্ভব হয়। সৌভাগ্যবশত বিভিন্ন সংস্থা ও দল মিলে তাদের দুর্যোগ মোকাবিলা ও ত্রাণকার্য্যের সুবিধার কারণে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন। এমনি ছয়টি অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আজকের আলোচনা যেগুলো বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষকে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সহয়তা করবে।
১. প্রজেক্ট নোয়াহ (Project NOAH)
প্রজেক্ট নোয়া “Project NOAH (Nationwide Operational Assessment of Hazards)” হচ্ছে ফিলিপাইন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সরকারী মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। এটি আবহাওয়ার খবর কিংবা বন্যা পূর্বাভাসের মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া এটি ফিলিপাইনের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, রাডারে ধারণকৃত ছবি ও ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য ও ছবি ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, জিমেইল এমনকি ব্লুটুথের মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে।
২. ফ্লাড পেট্রোল (Flood Petrol)
ফিলিপাইনের বন্যা পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে এন্টিনিও জাভা ওয়্যারলেস কম্পেটেন্সির বন্যা পর্যবেক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রোজেক্ট নোয়া একযোগে কাজ করে থাকে। ফ্লাড পেট্রোল অ্যাপলিকেশনটি শুধু যে একটি নির্দিষ্ট এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাই নয়, এটি আরও উন্নত ম্যাপিং সেবা দিতে ঐ এলাকার অধিবাসীদের কাছ থেকে বন্যা পরিস্থিতির বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে প্রজেক্ট নোয়া’র নিকট প্রেরণ করে থাকে। এই প্রতিবেদনগুলো পরে কোন এলাকায় ত্রাণ সহয়তা বেশি দরকার তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
৩. ওয়াটার ফর থাই (Wayter4Thai)
‘ওয়াটার ফর থাই’ অ্যাপ্লিকেশনটি থাইল্যান্ডের অধিবাসীদেরকে আসন্ন বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে সহয়তা করে থাকে। এটি জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ থেকে আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়া নদীতে পানির উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্যও প্রকাশ করে থাকে। এটি মূলত চার্ট, গ্রাফ ও লিস্টের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করে থাকে।
৪. সুনামি ট্র্যাকার (Tsunami Tracker)
২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামি বিশ্বকে থমকে দেয়। তারপর আরও একবার ২০১১ সালে জাপানে ভয়াবহ সুনামিতেও। এর পরেই ভূমিকম্প পরবর্তী সুনামি সম্পর্কিত তথ্য আগাম জানার উপায় খুঁজে বের করতে তোড়জোড় শুরু হয়। এটি ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে সরাসরি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে প্রদান করে থাকে। এছাড়া এটি এশিয়ার বিভিন্ন দুর্যোগ কবলিত এলাকা হতে ইমারজেন্সি ফোনকল প্রয়োজনীয় নম্বরে প্রেরণ করার কাজও করে থাকে।
৫. ডিজাস্টার অ্যালার্ট (Disaster Alert)
এই অ্যাপ্লিকেশনটি নিজের নামের মতই বিশ্বের বিভিন্ন দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করে থাকে। এটি একই সময়ে বিভিন্ন স্থানের দুর্যোগ সম্পর্কিত তথ্যের যোগান দিতে সক্ষম।
৬. ইউবি অ্যালার্ট - ডিজাস্টার অ্যালার্ট নেটওয়ার্ক (ubAlert – Disester Alert Network )
অন্যান্য দুর্যোগ সম্পর্কিত অ্যাপ্লিকেশনের মত এই অ্যাপ্লিকেশনটি কেবলমাত্র যে বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করে তা নয়। বরঞ্চ এটি ব্যবহারকারীদের নিকট হতেও তথ্য সংগ্রহ করে। এটি গ্রাফ, লিস্ট, চার্ট, চিত্র, এবং ভিডিওর মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করে থাকে যেগুলো পরে ইমেইল, ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে। আরেকটি মজার ব্যাপার হল এটি আবহাওয়ার তথ্য ছাড়াও সন্ত্রাসী হামলা ও কোন এলাকায় ভাইরাস সংক্রান্ত মহামারীর তথ্য দিতে সক্ষম।
সবশেষে বলা যায় যে, এই এ ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো আমাদের দেশের জন্যে উপযোগী করে তৈরি করা হলে প্রতি বছর লাখো মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে আগে থেকেই সতর্ক হতে পারবে।
তথ্যসূত্রঃ ম্যাশেবল